কৃষি ইউনিট এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিট
সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় ‘কৃষি ইউনিট ও প্রাণিসম্পদ ইউনিট’এর কার্যক্রম নভেম্বর, ২০১৩ ইং হতে শুরু হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এর নাম পরিবর্তন করে কৃষি ইউনিট এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিট রাখা হয়। যথোপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট অধিক সংখ্যক প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ এবং যথাযথ সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের দোড়গোড়ায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিগুলো পৌঁছানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখে ‘কৃষি ইউনিট’ এবং ’মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিট’ গঠন করা হয়। বিগত এক দশকের অধিক সময় ধরে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ( পিকেএসএফ ) বিভিন্ন প্রকল্প ও মূল¯্রােত কর্মসূচীর আওতায় কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়ন করে আসছে। কর্মসূচির শুরু থেকে এ ধরনের কর্মসূচীর মাধ্যমে সুবর্ণচর উপজেলার সংস্থার ৪ টি শাখার কর্মএলাকায় সংগঠিত সদস্যদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নমনীয় শর্তে ঋণ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি লাগসই প্রযুক্তি সরবরাহ ও কারিগরি সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণের ফলে একদিকে যেমন কৃষিজ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উংপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন সম্ভব হচ্ছে অন্যদিকে সদস্যদের বাৎসরিক বাড়তি আয়েরও সুযোগ হচ্ছে।
কৃষি ইউনিটের আওতায় গুটি ইউরিয়া ব্যবহার , বিষমুক্ত উপায়ে সবজি উৎপাদনে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার, উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদন, মানসম্পন্ন ধান বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষন, বসতবাড়িতে শাকসবজী ও ফলমূল উৎপাদন, ট্রাইকো-কম্পোষ্ট উৎপাদন, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ/টমেটো চাষ, জমির আইলে সবজি উৎপাদন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কৃষি অভিযোজন, ক্রপিং প্যাটার্ন প্রদর্শনী, কোকোডাষ্ট ব্যবহার করে সবজি/ফলের চারা উৎপাদন, বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব ব্যাগিং প্রযুক্তি, কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র, মাঠ দিবস ইত্যাদি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের আওতায় মৎস্যখাতে কার্প-মলা মিশ্র চাষ, কার্প-গলদা চিংড়ী মিশ্র চাষ, দেশী শিং/মাগুর-পাবদা-কার্প মিশ্র চাষ, কুচিয়া চাষ/মোটাতাজাকরণ, কার্প ফ্যাটেনিং/ কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ, রাক্ষুসে মাছের মিশ্র চাষ, ভিয়েতনাম পাঙ্গাস ও কার্প মিশ্র চাষ, ভেটকি-পারশে-কার্প-তেলাপিয়া মিশ্র চাষ ও পাড়ে বছরব্যাপী সবজি চাষ, নার্সারী পুকুর/মাছের পোনার ব্যবসা, পন্ড ডাইক গ্রীনিং, উদ্বুদ্ধকরন ভ্রমন, পোনা অবমুক্তকরন ইত্যাদি।
প্রাণিসম্পদ ইউনিটের আওতায় কেঁচো সার খামার স্থাপন প্রদর্শনী, উন্নত বা সংকর জাতের গাভি পালন প্রদর্শনী, মাচা পদ্ধতিতে দেশী জাতের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন (জাগরণ) প্রদর্শনী, টার্কি পালন প্রদর্শনী, ব্রয়লার মুরগি পালন প্রদর্শনী, লেয়ার মুরগি পালন প্রদর্শনী, হাঁস পালন প্রদর্শনী, পাঁঠা পালন প্রদর্শনী, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফডার উৎপাদন প্রদর্শনী, উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রদর্শনী, খামার দিবস, প্রশিক্ষন ও বিভিন্ন ধরনের টিকা এবং কৃমিনাশক সহ বিভিন্ন উপকরন প্রদান করা হয়।
কৃষি ইউনিট কার্যক্রমের আওতায় কর্মএলাকা ও উপকারভোগীর বিবরণ :
জমির আইলে সবজি চাষ, কোকোডাষ্ট ব্যবহারে প্লাষ্টিক ট্রে তে সবজি ও ফলের চারা উৎপাদন, উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চমুল্যের ফসল চাষ :
চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর উড়িয়া গ্রামের কমলা মহিলা উন্নয়ন সমিতির আমেনা বেগমের স্বামী মো: ইমরান বিজলী-১১ টমেটো চাষ করে ৭৫০০০ টাকা আয় করেন। | চরবাটা শাখার মনির মার্কেট ব্যবসায়ী উন্নয়ন সমিতির কৃষক মো: মিলাদকোকোডাস্ট ব্যবহার করে প্লাষ্টিক ট্রে তে মাটি বিহীন বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করেন। |
চরবাটা ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের কৃষানী রোকেয়া বেগম এর স্বামী আবুল কালাম ধান ক্ষেতের আইলে সীম চাষ করে বাড়তি টাকা আয় করেন। | চরজব্বার ইউনিয়নের চরজব্বার শাখার পল্লীবধু মহিলা উন্নয়ন সমিতিরকৃষক মো: রুহুল আমীন গ্রীন লেডি পেপেঁ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। |
জমির আইলে সবজি চাষ বর্তমান সময়ে একটি কার্যকরী ফসল উৎপাদনের মাধ্যম। চরবাটা ও চরজব্বার ইউনিয়নে এ বছর ১০টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। কোকোডাস্ট ব্যবহার করে প্লাষ্টিক ট্রে তে মাটি বিহীন বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করেন ৪ জন কৃষক। এ প্রদর্শনীর আওতায় এক একেকজন কৃষক ১৫,০০০-৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন।
চরবাটা, চরক্লার্ক, মোহাম্মদপুর, চরজব্বার, চর জুবলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ বছর উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে বেবি তরমুজ, পেঁয়াজ তাহেরপুরী, বø্যাক রাইচ, বিজলী-১১ টমেটো, গ্রীন লেডি পেঁপে, বিনা ধান-১৪, ঢাকা-১(মাইজচর)বাদাম, বারি ফেলন-১,হাইব্রীড ঢেঁড়স সীমা, গ্রীন ডায়মন্ড তরমুজ, বারি সয়াবীন-৫, বারি সয়াবীন-৬, সূর্যমূখী সানরাইজ-২, ভুট্টা চঅঈ ৫৫৯, মোট২০ টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়। বেশিরভাগ প্রদর্শনীর কৃষক এই করোনাকালীন সময়েও লাভবান হতে সক্ষম হয়েছেন।
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ, বসতবাড়িতে শাকসবজি ও ফলমূল চাষ, ট্রাইকো-কম্পোষ্ট সার উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কৃষি অভিযোজন কৌশল:
চরক্লার্ক, চরবাটা, চরজব্বার ও চর মহিউদ্দিন ইউনিয়নে ৬ জন কৃষকের মাধ্যমে প্রথমবারের মত গ্রীষ্মকালীন টমেটো হিসেবে লাল বাহাদুর এবং গ্রীষ্মকালীন বেবি তরমুজ ইয়েলো ড্রাগন চাষ করা হয় যার বিশেষত্ব ছিলো তরমুজের ভিতরের অংশ হলুদ যা খেতে খুব সুস্বাদু হওয়াতে কৃষক বাজারমুল্য অনেক বেশি পেয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো এবং বেবি তরমুজ চাষ করে কৃষক স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি লাভবান হয়েছেন।