কর্মসূচির পটভূমি ও প্রেক্ষাপট :
পিকেএসএফ এর সহযোগিতায় সাগরিকা বর্তমানে মানব-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মানবকেন্দ্রিক বহুমাত্রিক ও সমন্বিত সেবাদি প্রদানের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে উপযুক্ত কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ ধারাবাহিকতায় সাগরিকার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় কিশোর-কিশোরীদের জন্য কৈশোর কর্মসূচি (Programme for Adolescents) কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৩.৬০ কোটির বেশি কিশোর-কিশোরী রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। আজকের কিশোর আগামী দিনের দেশ ও সমাজ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিবে। দেশে চলমান ‘জনমিতিক লভ্যাংশ’র সুফল পেতে কিশোরদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি উন্নত মূল্যবোধ সম্পন্ন ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে গড়ে তোলা আবশ্যক। ‘তারুণ্যে বিনিয়োগ টেকসই উন্নয়ন’-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কর্মসূচিটি গৃহীত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা ডিসি মহোদয় ৫ নং ওয়ার্ড কৈশর ক্লাবের সদস্যদের মাঝে বই বিতরণ করেন।
এ প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ইউপিপি-উজ্জীবিত প্রকল্পটি এপ্রিল ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত ২৮টি কর্মকাণ্ডের মধ্যে ‘উজ্জীবিত কিশোরী ক্লাব’ অন্যতম। কৈশোর সময়টায় মানুষের উন্নত মননশীলতা এবং মূল্যবোধের ভিত্তি তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে তাদের নিজের ও সমাজ জীবনে ভূমিকা রাখে। উজ্জীবিত প্রকল্পাধীন কিশোর-কিশোরী ক্লাবগুলোর কর্মকাণ্ড তৃণমূল পর্যায়ে সামগ্রিক উন্নয়নে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে প্রকল্পাধীন কিশোর-কিশোরী ক্লাবগুলো কৈশোর কর্মসূচির আওতায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
জুলাই ২০১৯ হতে ‘কৈশোর কর্মসূচি’ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হবে। কর্মসূচিটির ব্যয় পিকেএসএফ এবং সাগরিকা যৌথভাবে বহন করবে।
কর্মসূচির উদ্দেশ্য সমূহ :
- কিশোর-কিশোরীদেরকে সৎ গুণাবলী অর্জন, সত্যবাদিতার চর্চা, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সুসভ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি শুভ বুদ্ধি, উন্নত বিজ্ঞানবোধ লালন এবং প্রগতিশীলতার চর্চায় উৎসাহ প্রদান করা;
- উগ্রতা, অশ্লীলতা, অশুভ ও নেতিবাচক কাজ, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক অপরাধ ও অবক্ষয়সমূহের প্রতি কিশোর-কিশোরীদেরকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির পাশাপাশি উন্নত জীবন শৈলী তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা;
- কিশোর-কিশোরীদের সুস্বাস্থ্য অর্জন, বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করা। তাদেরকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাবোধ এবং প্রকৃতি ও দেশপ্রেম বিষয়ে সচেতন করা;
- আত্মনির্ভরশীল, সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া, সৃজনশীলতার চর্চা, মেধার বিকাশ, সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন জীবনাচরণবোধ এবং অধ্যবসায় ও নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষায় কিশোর-কিশোরীদেরকে উৎসাহিত করা;
- আজকের কিশোর-কিশোরী আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব দিবে। এ প্রেক্ষিতে কিশোর-কিশোরীদের আত্মবিশ্বাসী , সাহসী ও ভালো মানসিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে যা দেখে পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ হয়;
- প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া যেন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হবার প্রবণতা তৈরিসহ নিজেদের জীবনদক্ষতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়। তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করা;
- কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পরোপকারী মনোভাব এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, ধর্ম-বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সাথে সৌহার্দ্য, সম্মান ও সহমর্মিতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা। সম্মিলিতভাবে সামাজিক অপরাধ-অবক্ষয় রোধ ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে উৎসাহিত করা;
- কিশোর-কিশোরীদের মনন ও সুকুমার বৃত্তির উন্নয়ন ঘটানো, ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুশীলন, দেশজ সংস্কৃতি চর্চা এবং শারীরিক গঠনে দেশীয় খেলাধুলার চর্চায় উৎসাহিত করা;
- মানসিক চাপমুক্ত ও আনন্দময় শিক্ষার পাশাপাশি তাদের জন্য পারিবারিক ও সামাজিক সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করা যাতে একটি বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত সুন্দর দেশ গঠনে তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে;
- কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের জনসাধারণের মধ্যে নিজেদের উদ্যোগে একই ধরনের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য উৎসাহ সৃষ্টি এবং তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা।
কর্ম-এলাকা ও উপকারভোগীঃ নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় সংস্থার কর্ম এলাকার কিশোর কিশোরী। উক্ত এলাকায় ৩৯ টি কিশোর কিশোরী ক্লাব ও ২৫ টি স্কুল ফোরামের মাধ্যমে প্রায় ২৭০০ জন কিশোর কিশোরী এই কর্মসূচির আওতাভূক্ত। কর্মসূচির মেয়াদকাল : জুলাই-২০১৯ সাল থেকে চলমান।